Faham Abdus Salam
আমি গর্বিত - আপনাদের সময়ে ছিলাম বলে।
বিশ্বাস করুন, আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিলো না যে আপনারা দাবী আদায়ে ব্যর্থ হবেন, আপনাদের পিটিয়ে আধমরা করা হবে, আপনাদের ৯ দফায় মৃত্যুদণ্ডের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটাও আমি অপছন্দ করি।
তবু আমি আপনাদের অর্জনকে অসামান্য মনে করি। আপনাদের সাফল্যের য়ার্ডস্টিক জানা নেই বলে বিফল বলবে দুর্জন; কিন্তু আপনাদের দেখে আশা হয়।
আপনারা এই রাষ্ট্রের ওপর আপনাদের ঔনারশীপ এসার্ট করেছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন - যেটা আমরা কোনোদিন পারি নি, আজো না। এটা খুবই, খুবই বড় ঘটনা।
আপনারাই নিয়ে নিন এই রাষ্ট্র। লেনার্ড কোহেনকে একটু মনে করলাম ঠিক এইখানে:
Take this waltz it's been dying for years
........................
কথা ছিলো আমরা আপনাদের সাথে দাঁড়াবো, সন্তানদের পাশে পিতামাতার দাঁড়ানোরই কথা - কিন্তু আমরা জীবনের চাকরি করি বলে দাঁড়াতে পারি নি। আমাদের ক্ষমা না, উপেক্ষা করবেন। কিছু কথা তবু বলা প্রয়োজন:
জটিল সংঘাত ও গভীর মোকাবেলার সময় কখনো দেখবেন না কে সঠিক আর কে ভুল - দেখবেন কে শক্তিমান আর কে শক্তিহীনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। যারা শক্তিহীনের পক্ষে দাঁড়ায় নি, তাদের আপনারা বেনিফিট অফ ডাউট দেবেন বিবেচনা করে। কিন্তু যারা শক্তিমানের পক্ষে দাঁড়ায় - নিশ্চিত জানবেন এরা গণশত্রু।
আপনাদের খুলে বলার প্রয়োজন নেই শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ আর পুলিস বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গেছে - জরুরী বিষয় হোলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন কোনো শেখ হাসিনার সৃষ্টি না হয় - কোনো দল থেকেই।
আপনারা কখনোই কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্রের কামনা করবেন না। রাষ্ট্র ইনহেরেন্টলি এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেটা দুর্বলের বিপক্ষে যায়। রাষ্ট্র এমন একটা প্রতিষ্ঠান যেটা দুনিয়ার সব প্রতাপ আর দশবার ধ্বংস করার মারণাস্ত্র নিয়েও আপনাকে বোঝাতে পারবে যে একজন ব্যক্তি এমনই ভয়ঙ্কর যিনি পুরো রাষ্ট্রকে শেষ করে দেবেন - তাই ভিকটিম আরোও বেশী বেশী শাস্তির যোগ্য। এই বিকার রাষ্ট্রের অধীনস্তদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। রাষ্ট্র যতো শক্তিশালী হবে এই বিকার ততো পোক্ত হবে। আপনারা সব সময় শক্তিহীন ইন্ডিভিজুয়ালের পক্ষে থাকবেন, তারা ভুল করলেও তাদের কাঁধে হাত দেবেন। যেখানেই পারবেন, যখনই পারবেন রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে ভেঙে কমিউনিটির ওপর ন্যস্ত করবেন। এতে অবিচারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অবিচারের মাত্রা অনেক কম হবে। যদি একেবারেই না পারেন কনফ্লিকটিং এনটিটি তৈরী করে পাওয়ার ব্যালেন্স করার চেষ্টা করবেন।
যখন আপনাদের উপর পুলিশ গুলি করছিলো তখন হয়তো আপনারা ভেবেছিলেন সেনাবাহিনী কেন আপনাদের রক্ষা করতে পুলিশকে গুলি করে না। উল্টা দেখুন পুলিশ আপনাদের উপর ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। এটাই রাষ্ট্রকে ভায়োলেন্স করবার মনোপোলি দেয়ার অনিবার্য পরিণতি - যেখানে আইনের শাসন নেই। মনে রাখবেন রাষ্ট্রকে ভায়োলেন্সের মনোপোলি দেয়ার যে দর্শন, যে সময়ের দর্শন - সে সময় কেউ কল্পনাও করে নি যে রাষ্ট্রের এরকম দানবীয় ক্ষমতা হবে একদিন। আমাদের সময়ে তাই এই মনোপোলি ভাঙাটা প্রয়োজন কি না - একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
আপনারা যদি শক্তিহীনের পক্ষে না থাকেন, নিশ্চিত থাকুন আপনারা দুর্বলকে ধ্বংস করার পক্ষে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোদী কিংবা হাসিনা যতোই মুসলিমপীড়ক হোক না কেন আপনারা অবশ্যই নিঃশর্তভাবে হিন্দু-বিহারী-আদিবাসী ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পক্ষ নেবেন - আপনাদের মুসলমান ও জাতীয়তাবাদী বন্ধুদের বিপক্ষে দাড়িয়ে হলেও। মানবিক বলে না হলেও নিজেকে এলিটিস্ট মনে করে করবেন - পলিটিক্যালি হেরে গেলেও আপনার ইগো প্রশমিত হবে।
যেকোনো অতীত বন্দনাকারীকে আপনারা অন্তত গর্দভ বলে শনাক্ত করবেন। যদিও বাস্তব জীবনে আপনারা একনিষ্ঠ অতীত পূজারীদের বেশীরভাগকেই দেখবেন - হারামী। ধর্ম কিংবা জাতীয়তা - যেটাকেই বেদীতে রেখে অতীতপূজা হোক না কেন - মনে রাখবেন অতীতপূজার একটাই মঞ্জিলে মকসুদ - একদল মানুষকে আপনারা ঘৃণা করতে শিখবেন তাদের কাজ না, পরিচয়ের কারণে।
আপনারা অবশ্যই মেরিটোক্রেসিতে আস্থা রাখবেন। কখনোই এমন নেতার পেছনে দাঁড়াবেন না, যিনি মেরিটোক্রেসির সুফল ভোগ করেন নি। মেরিটোক্রেসির সুফল ভোগ না করা মানুষটি - যতো সৎ কিংবা দরিদ্রই হোক না কেন - সব সময় শক্তিমানের পক্ষ নেবেন, তারা সুবিচার করতে ফান্ডামেন্টালি অক্ষম।
আপনারা শেখ পরিবারকে গভীর ভাবে দেখুন। এই পরিবারে টিউলিপ সিদ্দিকী ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই যিনি মেরিটোক্রেসির সুফল ভোগ করেছেন। শেখ সাহেব যদিও নিজের চেষ্টাতেই বাংলাদেশের অবিসংবাদী নেতা হয়েছিলেন; মনে রাখবেন তিনি জীবনে দশ বছরের বেশী সময় জেলে ছিলেন। সন্দেহ নেই যে তিনি এ দেশের মানুষের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন কিন্তু এই দশ বছরে - যে বয়সটা আমাদের বেশীরভাগের ক্যারিয়ারে মেক ওর ব্রেক ফেইজ - জেলে থাকার কারণে সেই বয়সে তাকে ও তার পরিবারকে অন্যের দান গ্রহণ করতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় যারা অন্যের দানে চলেছেন, তারা উইথআউট এক্সেপশন - কনফ্লিক্টিং সিচুয়েশনে শক্তিমানের পক্ষ নেবেন। আপনি পেশাগত ভাবে সফল না হতে পারেন, আপনি বড়োলোক না হতে পারেন - অসুবিধা নাই; কিন্তু আপনি যদি মেরিটোক্রেসির সুফল না ভোগ করে থাকেন আপনি সব সময় ‘বিশ্বস্ততা’ কে ওভাররেইট করবেন। ৯০ ভাগ মানুষের জীবনে এই মনে করা, না করার কোনো তাৎপর্য নেই। কিন্তু আপনার পলিটিকাল লীডার যদি মেরিটোক্রেসির সুফল না ভোগ করে থাকেন তিনি সব জায়গায় বিশ্বস্ত কিন্তু অযোগ্য লোককে প্রমোট করবেন, নিশ্চিত থাকুন।
কখনোই - ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক জীবনে ফলাফলের ভারসাম্যের চেষ্টা করবেন না, আপনারা চেষ্টা করবেন পদ্ধতির ভারসাম্য আনতে। আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপিকে দানব বানানোর চেষ্টা যারা করে তাদের পরিহার ও মোকাবেলা করবেন - কিন্তু এমন চেষ্টা অবশ্যই করবেন যেন বিএনপি-আওয়ামী লীগ বা অন্যান্য যে কোনো দল সমান সুযোগ পায়। ন্যায্যতার প্রশ্নে যারা ছাড় দেয় বা চুপ করে ঘাপটি মেরে থাকে, নিজের দলের হলেও তারা আপনার ক্ষতিই করবে - এগেইন, এটা মেরিটোক্রেসির সুফল ভোগ না করার বিকার।
আমাদের প্রজন্ম আপনাদের রাজনৈতিক দীক্ষা দেবে ঘৃণার শিক্ষা দিয়ে - যে কোনো মূল্যে এদের বর্জন করবেন। এমন কি শেখ হাসিনাকেও ঘৃণা করার অজুহাত খুঁজতে যাবেন না। একজন ব্যক্তিকে ঘৃণা করার প্রথম শর্ত হোলো তাকে আপনার নিরঙ্কুশ মনোযোগের দাবীদার মনে করা। যেহেতু শেখ হাসিনা কোনো সুস্থ মানুষের নিরঙ্কুশ মনোযোগ দাবী করেন না সেহেতু তাকে ঘৃণা করা অপচয়মূলক ও নিজের শ্লাঘার প্রতি অত্যাচার। এই আত্মঘাতী অনাচার থেকে দূরে থাকবেন।
তবে - শেখ হাসিনা বা তার দল যদি এতো হত্যা, লুন্ঠন ও গুমের পরেও আপনার একচ্ছত্র সমর্থন দাবী করতে পারেন, মানুষ হিসেবে আপনার বিবেচনাবোধ কতোটুকু - এই প্রশ্ন করবেন অবসরে।
মনে রাখবেন, আপনারা যারা স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় দেশকে বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখেছেন - তারা হারেন নি। কৈশোর আর যৌবনের এই স্বপ্ন আর সততাটুকু তুলে রাখবেন যত্ন করে - এক সময়ে কাজে দেবে, বিশ্বাস করুন।
দেশ না, শুধু মানুষ।
Take this waltz, take this waltz
It's yours now. It's all that there is